শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আয়োজিত মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলা জমছে না। মেলায় ক্রেতাসমাগম খুবই কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন মেলা নিয়ে তেমন প্রচার না চালানোয় জমছে না বলে তাদের অভিযোগ। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মেলায় ভালোই কেনাবেচা চলছে।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলার আয়োজন করেছে। গত ১ রমজান ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান মেলা উদ্বোধন করেন। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এবারের মেলায় ৬২টি স্টল অংশ নিয়েছে।
মেলায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ, তাফসির, হাদিসের বইসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক বই স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্টলে ৩৫ শতাংশ কমিশনে পবিত্র কুরআনের অনুবাদ, তাফসির, হাদিসসহ বিভিন্ন গবেষণামূলক বই বিক্রি করা হচ্ছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে প্রতি বছরই ইসলামি বইমেলার আয়োজন করা হয়। এবারো করা হয়েছে। কিন্তু সব কিছুই চলছে গতানুগতিক। মেলায় গিয়ে বোঝার উপায় নেই এখন কোন মেলা চলছে। ক্রেতাদের ভিড় নেই। বেচাকেনাও কম। মেলার প্রবেশপথেই হকারদের জটলা। পায়জামা-পাঞ্জাবি, আতর-টুপি নিয়ে হকারদের আর্তচিৎকার চলছে মুহুর্মুহু। একটি ছোট গেটের ওপরে লেখা আছে ইসলামি বইমেলা কিন্তু তাও ঠিকমতো দেখা যায় না। এত কিছু নেই এর মধ্যে আছে শুধু বিক্রেতাদের হাহুতাশ। তাদের অভিযোগ ইসলামিক ফাউন্ডেশন শুধু মেলা আয়োজন করেই দায়িত্ব শেষ করছে। মেলা নিয়ে কোনো প্রচারণার ব্যবস্থা নেই তাদের।
গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের মাহবুবুর রহমান দিদার নয়া দিগন্তকে বলেন, বায়তুল মোকাররমে যে মেলা চলছে তা মেলা থেকে সামান্য দূরের মানুষও ঠিকমতো জানে কি না সন্দেহ। ক্রেতা টানার কোনো কৌশলই করা হয়নি। কোনো প্রচার নেই। আশপাশের রাস্তায়ও ব্যানার-পোস্টার দেয়া হয়নি। তাই ক্রেতারা জানতেই পারছেন না যে এখানে একটি বইমেলা চলছে।
এমদাদিয়া লাইব্রেরির বিক্রয় প্রতিনিধি মো: শাহিন বলেন, মেলায় বিক্রি তেমন নেই বললেই চলে। ক্রেতা আসছে খুব কম। মানুষ জানেই না মেলা হচ্ছে। কোনো প্রচার নেই। মানুষ কিভাবে জানবে?
মীনা বুক হাউজের মো: সোলায়মান জানান, বিক্রি ভালো হচ্ছে না। সারা দিনে অল্প কিছু বই বিক্রি হয়। দেখেন না এখন স্টলের সামনে কোনো লোকই নেই।
কয়েকজন বিক্রেতা জানান, মেলার প্রবেশ মুখে হকাররা বসে পড়েছে। তাদের কারণে মেলায় লোকজন ঢুকতে পারছে না। এ ছাড়া তাদের কারণে বাইরে থেকে এখানে যে মেলা হচ্ছে তাও বোঝার উপায় থাকে না। এটাও ক্রেতা কম উপস্থিতির আরেকটা কারণ। মেলায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অনিয়ম করা হয় বলে তারা অভিযোগ করেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র অবসরপ্রাপ্ত সুপারইনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবদুল বাতেন মেলায় এসেছেন কিছু অভিধান বই কিনতে। তিনি বলেন, প্রতি বছরই কিছু বই কিনি। বাসায় একটি ছোট লাইব্রেরিও আছে। কিন্তু মেলায় খুব বেশি লোক দেখছি না। অল্প কিছু লোক আছে। বাংলা একাডেমির মেলায় তো অনেক লোক হয় এখানে কেন নেই তা আয়োজকদের ভেবে দেখা উচিত।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ড. হারুনুর রশীদ নয়া দিগন্তকে বলেন, মেলা নিয়ে প্রতিদিন বায়তুল মোকাররমে নামাজের পর মুসল্লিদের বলা হয়। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্টলে বই বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে তিনি জানান। হারুনুর রশীদ বলেন, বাংলা একাডেমির মেলা নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিসহ স্বার্থসংশ্লিষ্টরা অনেক বিনিয়োগ করেন। সেখানে অনেক ব্যাপার থাকে, যা ইসলামি বইমেলার ক্ষেত্রে হয় না। হকার সমস্যা বিষয়ে তিনি বলেন, হকার একটি জাতীয় সমস্যা। এটি সিটি করপোরেশনের মেয়র দেখে থাকেন। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মেলা চলবে বলে তিনি জানান।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, কুরআন-হাদিস গ্রন্থের পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামি শিক্ষামূলক বই, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামিব্যক্তিত্বদের জীবনীসহ বিভিন্ন ধরনের বই বিক্রি চলছে। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে বিশ্বনবীর জীবনী, তাজকেরাতুল আউলিয়া, নূরানি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ২৪ ঘণ্টায় কুরআন শিক্ষা, রাসূল সা:-এর ২৪ ঘণ্টার আমল, ইমাম গাজ্জালির জীবন, গিবত ও চোগলখোরির ধ্বংসলীলা, মরণের আগে ও পরে, ইসলামে হালাল ও হারাম প্রভৃতি।
তবে বইমেলায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ানকে নিয়ে লেখা ‘এরদোয়ান দ্যা চেঞ্জ মেকার’, অটোম্যান সাম্রাজ্য নিয়ে লেখা ‘সানজাক-ই-উসমান’, ড. হিশাম আল আওলাদির লেখা ও মাসুদ শরীফের অনুবাদ করা ‘বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ সা:, ইসলামের চোখে পৃথিবীর ইতিহাস ‘ডেসটিনি ডিজারাপ্টেড’, মিসরের বিখ্যাত লেখক ড. আয়াজ আল কারনির লেখা ‘লা তাহযান’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘হতাশ হবেন না’ বইগুলোর বিক্রি বেশি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
সূত্র : নয়া দিগন্ত